শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন
নূরুল ইসলাম মনি : আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাহুবল সদরসহ ৪টি কেন্দ্র স্থানান্তর হচ্ছে। তন্মমধ্যে বাহুবল সদর কেন্দ্রটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। স্থানান্তরের প্রস্তাবগুলো হলো- বাহুবল সদর ইউনিয়নের বড়ইউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি বড়ইউড়ি চারগ্রাম মোশাররফিয়া মাদ্রাসায় ও বাহুবল আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি ছদরুল হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, মিরপুর ইউনিয়নের মিরপুর পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি ২নং মিরপুর (চন্দ্রছড়ি গ্রামে অবস্থিত) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ভাদেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রটি রশিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত উপজেলা নির্বাচনে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৬১ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটি গত ১৮ মার্চ এক সভায় মিলিত হয়। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার শাহনাজ আক্তার, সদস্য বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাসান মোহাম্মদ জুনায়েদ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অঃ দাঃ) মোহাম্মদ উলা। সভায় উপজেলা নির্বাচন অফিসার শাহনাজ আক্তার প্রস্তাব করেন যে, ‘বড়ইউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১টি শ্রেণি কক্ষ ও ১টি অফিস কক্ষ রয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে উক্ত কেন্দ্রে বুথ ছিল ৮টি, ভোটার ছিল ৩ হাজার ৫৬৪ জন। ২টি কক্ষ দিয়ে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম কষ্টকর তাই কেন্দ্রটির পার্শ্ববর্তী বড়ইউড়ি চারগ্রাম মোশাররফিয়া মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত রুম থাকায় সেখানে স্থানান্তর প্রয়োজন। বাহুবল আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটির মাঠ ছোট হওয়ায় ছদরুল হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্থানান্তর প্রয়োজন। মিরপুর পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি জরুরী স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত থাকায় কেন্দ্রটি পরিবর্তন করে ২নং মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এছাড়া ভাদেশ্বর ইউনিয়ন অফিস কেন্দ্রটি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রশিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্থানান্তর হয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও উক্ত কেন্দ্রটি রশিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাচন অফিসারের এ প্রস্তাবের আলোকে কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে কেন্দ্রগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে।
প্রস্তাবিত নতুন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বড়ইউড়ি চারগ্রাম মোশাররফিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলাপুর, ইসলামপুর, চক হাবিজপুর, ছোট বড়ইউড়ি, জাঙ্গালিয়া, বড়ইউড়ি ও হাবিজপুর গ্রামের ভোটাররা ভোট দান করবেন। ছদরুল হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইছাকপুর, দশকাহনিয়া, দৌলতপুর, বাদে সাতপাড়িয়া, বাহুবল, বাহুবল বাজার, সাতপাড়িয়া, উত্তরসুর ও দয়ালপুর গ্রামের ভোটাররা ভোট দান করবেন। ২নং মিরপুর (চন্দ্রছড়ি) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আব্দুলাহপুর, গোলগাঁও, চন্দ্রছড়ি, তিতারকোণা ও শাহাপুর গ্রামের ভোটাররা ভোট দান করবেন। এছাড়া রশিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে উড়িয়াটিলা, রশিদপুর চা বাগান, রশিদপুর চা বাগান বড়লেন, রশিদপুর বাজার ও সামারুটিলার বাসিন্দারা ভোট দান করবেন।
প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাহুবল সদরের প্রস্তাবিত ছদরুল হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটিকে ঘিরে স্থানীয় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রস্তাবনাটির বিরুদ্ধে গত ক’দিন ধরে চলছে ব্যাপক আলোচনা, পর্যালোচনা ও সমালোচনা।
প্রস্তাবিত ছদরুল হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী বলেন, “সদরের কেন্দ্রটি স্থানান্তরের প্রস্তাবটি সঠিক হয়নি। কেন্দ্রটির আওতাভূক্ত দয়ালপুর, উত্তরসুর ও সাতপাড়িয়া গ্রামের সাথে প্রস্তাবিত কেন্দ্রের দূরত্ব আরো বেড়ে যাবে। যা ভোটার উপস্থিতি কমাবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি সুবিধাজনক নয় বিধায় প্রস্তাবনাটি বাতিল করে পূর্বের কেন্দ্র বহাল রাখতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
একই কেন্দ্রের সাতপাড়িয়া গ্রামের ভোটার ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ফরিদ মিয়া তালুকদার বলেন, “আমাদের গ্রাম থেকে বর্তমান কেন্দ্রের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি আরো অর্ধকিলোমিটার দূরবর্তী এবং জনবসতির ভেতরে অবস্থিত। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি চূড়ান্ত হলে নিরাপত্তা ও দূরত্বজনিত কারণে ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করবে। এ অবস্থায় কেন্দ্রটি স্থানান্তরের প্রস্তাবটি বাতিল করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
একই কেন্দ্রের উত্তরসুর গ্রামের ভোটার ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ বলেন, “আমাদের পার্শ্ববর্তী দয়ালপুর গ্রাম থেকে বর্তমান কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি চূড়ান্ত হলে দূরত্ব বেড়ে তিন কিলোমিটারে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় জনস্বার্থ পরিপন্থি এ প্রস্তাবটি বাতিল করে আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রটি বহাল রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।”
একই কেন্দ্রের দশকাহনিয়া গ্রামের ভোটার ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান অলি বলেন, “আমার গ্রাম থেকে পূর্ববর্তী কেন্দ্র অর্থাৎ বাহুবল আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার হলেও মেইন রুটের পাশে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত সূলভ। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটির দূরত্ব প্রায় একই হলেও মেইন রুট থেকে দূরে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা জটিল। এছাড়া প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি জনবসতির ভিতরে হওয়ায় পেশি শক্তি প্রয়োগের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে জনসাধারণের সুবিধা বিবেচনায় কেন্দ্র স্থানান্তরের প্রস্তাবটি বাতিল করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।”